রিভিউ লেখক: আলী ওসমান শেফায়েত
বই তো নয়, যেনো ‘বিদ’আত’র উপর লেখা কোনো এনসাক্লোপিডিয়া। ‘বিদ’আত’ নিয়ে এত বড় পরিসরে লেখালেখি এই জনপদে আর কেউ করছে কিনা আমি জানি না।
জেনারেল শিক্ষিত হওয়ায় এ বিষয়গুলো আমার সিলেবাসের বাইরের বিষয়। তারপরেও ইসলামকে জানার জন্য বিভিন্ন লেখকের বই পড়ার সুবাদে ও শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর লেখনি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামকে কুরআন ও হাদিসের মানদণ্ডে বুঝতে চেষ্টা করি। ঠিক তখনই সমাজে বিরাজমান হাজারো বিদআতের সাথে পরিচিত হই।
পরবর্তীতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক লিখিত ‘এহ্ইয়াউস সুনান : সুন্নাতের পুনরুজ্জীবন ও বিদ’আতের বিসর্জন’ ও হাদিসের নামে জালিয়াতি : প্রচলিত মিথ্যা হাদিস ও ভিত্তিহীন কথা’ বই দুইটি পড়ে ‘বিদ’আত’ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে সক্ষম হই।
তাছাড়া প্রতি জুমুআ ও দুই ঈদের দ্বিতীয় খুতবার (প্রত্যেক খুতবার বইয়ে নাই) শুরুতে নিম্নোক্ত হাদিসটি পাঠ করা হয়। যা ‘বিদ’আত’ সম্পর্কে একটি বড় সর্তকবাণী। বিদ’আতের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে গিয়ে করেছেন,
« إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ، وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ »
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব-উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” [নাসায়ী- ১৫৭৮।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কেউ আমাদের এ শরী‘আতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত” [সহিহ বুখারী- ২৬৯৭]।
দ্বীনের মধ্যে নতুনভাবে কিছু অনুপ্রবেশ ঘটানোর মাধ্যমে মূলত শরিয়তকে অপূর্ণ আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা দ্বীন পরিপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি” [সূরা মায়েদা: ৩]।
মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, “তিনি যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো, তাহলে আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তাঁর কণ্ঠশিরা কেটে দিতাম। তোমাদের কেউ-ই (আমাকে) এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতে না” [সূরা হাক্কাহ্: ৪৪-৪৭]।
যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যাপারে মহান আল্লাহর এমন কথা, সেখানে বিদ’আতে জড়িতদের শাস্তি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, “বিদ’আতের কারণে জাহান্নাম অবধারিত”। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” [নাসায়ী- ১৫৭৮]।
হাদিসে এসেছে, বিদ’আতে জড়িত ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবেন। ক্বিয়ামতের সেই বিভীষিকাময় কঠিনতম দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদ’আতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। “আমার সামনে এক জামাতকে (যারা আমার দ্বীনের পরিবর্তন করেছ) আনা হবে, তারা আমাকে চিনবে আমিও তাদের চিনবো কিন্তু পরক্ষণেই তাদের মাঝে ও আমার মাঝে আড়াল সৃষ্টি হয়ে যাবে” [সহিহ বুখারী- ৬৫৮২, ৬৫৮৩, ৬৫৮৪, ৬৫৮৬, ৬৫৮৭; সহিহ মুসলিম- ২২৯০, ২২৯৩]।
অন্য হাদিসে আছে, “…..অতঃপর আমি বলবো তারা আমার দলের। বলা হবে আপনি জানেন না, তারা আপনার অবর্তমানে বিদ’আত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলবো, দূর হও, দূর হও (আল্লাহর রহমত হতে), যারা আমার পর দ্বীনের মাঝে বিদ’আত সৃষ্টি করেছো” [সহিহ মুসলিম- ২২৯১]।
‘বিদ’আত’ শব্দটি শুনেননি এমন কোনো মুসলমান পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয় না। এতদসত্ত্বেও দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অনেকেই ‘বিদ’আত’ কি তা জানেই না। এই না জানার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় লিখিত তথ্যবহুল এবং সহজে বোধগম্য হয় এমন কোনো মানসম্মত বইয়ের অনুপস্থিতি।
আলহামদুলিল্লাহ! মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্বনামধন্য প্রফেসর ড. আহমদ আলী Ahmad Ali স্যারকে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লাম)’র পবিত্র সুন্নাহকে ‘বিদ’আত’ মুক্ত রাখার এই খেদমতের তাওফিক দান করেছেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ভেজালে সয়লাব হয়ে যাওয়া দুনিয়াতে দ্বীনের সঠিক রূপরেখা তথা রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লাম)’র প্রকৃত সুন্নাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের জন্য অন্ততপক্ষে এই বিদ’আত সিরিজটি সংগ্রহ করে পড়ুন।
যারা আমাকে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় বই সাজেস্ট করতে বলেন তাঁদের প্রতিও অনুরোধ থাকবে, স্যারের এই সিরিজটি সংগ্রহ করে পড়ে দেখুন। সঠিক পথের সন্ধান পাবেন ইনশাআল্লাহ।
সোর্স: ড. আহমদ আলী স্যারের পেইজ থেকে নেয়া।
মূল লিংক: এখানে ক্লিক করুন