ইসলামী ব্যাংকগুলোতে শরীয়া পরিপালনের মান বৃদ্ধিকল্পে কতিপয় সুপারিশ

লেখক: ড. আহমদ আলী 

[‘ইসলামী ব্যাংকে শরীয়া-পরিপালন ও লঙ্ঘন: সমস্যা ও উত্তরণ ভাবনা’ (প্রকাশিতব্য) বই থেকে] 

সুপারিশ:

নিম্নে শরীয়া পরিপালনের সূচক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করার জন্য এবং শরীয়া নীতিমালা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কতিপয় সুপারিশ করছি। 

আশা করছি, এসব সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে শরীয়া লঙ্ঘন বন্ধ হবে, অন্তত উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং ব্যাংক ইসলামী হওয়ার বিষয়টি যথার্থ হবে। 

১. ব্যাংকের মালিক, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা:

ইসলামী ব্যাংকে শরীয়া পরিপালন নিশ্চিত করা এবং এর মান বৃদ্ধি ও ধরে রাখার জন্য সবার আগে প্রয়োজন মালিক পক্ষ তথা বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রশ্নাতীত সদিচ্ছা ও পরিপূর্ণ আন্তরিকতা। 

এ জন্য বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও নির্বাহী পরিষদের প্রত্যেককেই_

১.১.  ইসলামী জীবনাদর্শের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী, আস্থাশীল এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি একান্ত অনুগত, দীনদার হতে হবে।  

১.২.  ইসলামী জীবনাদর্শ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে; ইসলমিক ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং সম্পর্কেও পর্যাপ্ত ধারণা রাখতে হবে।

১.৩. (আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া) প্রচলিত সুদী ব্যাংকগুলোর সাথে কারো কোনোরূপ লেনদেনের সম্পর্ক থাকবে না। 

২. শক্তিশালী শরীয়া বোর্ড গঠন

২.১. শরীয়া বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে অভিজ্ঞ হবেন। এ জন্য তাঁদের শরীয়া বিষয়ে, বিশেষ করে ফিকহুল মু‘আমলাত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির পাশাপাশি বাণিজ্য, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে ব্যাপক অধ্যয়ন ও স্বীকৃত গবেষণা থাকতে হবে; বর্তমান সময়ের ব্যাংকগুলোর লেনদেন ও চুক্তিগুলোর ভালোভাবে বোঝে তাতে সংঘটিত নানা ভুল-ত্রুটি ধরতে পারা ও তা সংশোধন করার যোগ্যতা থাকতে হবে। তদুপরি তুলনামূলক ফিকহ সম্পর্কেও তাদের প্রচুর ধারণা থাকা প্রয়োজন, যাতে ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন মাযহাবের মতগুলোকে তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করে অধিকতর যুক্তিসম্মত ও জনহিতকর অভিমতকে বেছে নেয়া যায়।  

২.২. শরীয়া বোর্ডের সদস্য নিয়োগের জন্য একটি কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনস্থ শরীয়া সেলের অনুমোদন ব্যতীত কোনো সদস্য নিয়োগ বা বরখাস্ত করা যাবে না। এর ফলে একদিকে যেমন যথেষ্ট যোগ্যতা ব্যতীত কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ কমে যাবে, তেমনি যথাযথ কারণ ব্যতীত কোনো সদস্যকে বাদ দেয়ার সুযোগও হ্রাস পাবে।  

২.৩. শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব বোর্ডের সদস্যগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছা ও সুবিধামতো যে কাউকে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব করতে পারবে না। 

২.৪. শরীয়া বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য সততা ও দীনদারির ক্ষেত্রে সুখ্যাত হবেন। এ কারণে সততা ও দীনদারির ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ বা দুর্বল চরিত্রের কোনো লোককে বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যকে এমন সত্যনিষ্ঠ, নির্লোভ ও সাহসী হতে হবে যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি শরীয়া-সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করে এবং তিনি চেষ্টা করেও তাদেরকে শরীয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাতে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করতে দ্বিধা করবেন না; না-জায়িয কাজগুলোকে অযথা হীলা-বাহানার আশ্রয় নিয়ে জায়িয করার চেষ্টা করবেন না এবং নিজে কমিটিতে আছেন_কেবল এ স্বার্থে কাউকে ইসলামী হওয়ার সার্টিফিকেট দিয়ে দিবেন না। 

২.৫. একজন ব্যক্তি একই সাথে একাধিক ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের সদস্য হতে পারবে না। এর ফলে নির্দিষ্ট কতিপয় ব্যক্তির ওপর শরীয়া বিষয়ক নির্ভরতা এড়ানো সম্ভব হবে।

২.৬. ব্যাংকের প্রভাবশালী কোনো শেয়ার হোল্ডার, ব্যাংকের ডিরেক্টর পদে আসীন কোনো ব্যক্তি এবং নির্বাহী কোনো কর্মকর্তা শরীয়া বোর্ডের সদস্য হতে পারবে না।

২.৭. শরীয়া বোর্ডের শরীয়া বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অবহেলা করতে পারবে না বা অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করতে পারবে না। (শরীয়া ম্যানুয়াল অনুসারে শরীয়া বোর্ডের যে কোনো সিদ্ধান্ত ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক- এমন কথা বলা হলেও কার্যত বোর্ডের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট অবহেলা বা দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যায়।) 

২.৮. ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ‘বোর্ড অব ডিরেক্টরস’ ও ‘এক্সিকিউটিভ কমিটি’তে শরীয়া বোর্ডের অন্তত একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা। এর ফলে শরীয়া বোর্ড ও ব্যাংকের মূল পর্ষদগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেকখানি কমে যাবে। 

২.৯. শরীয়া বোর্ডের সদস্যদের কর্মক্ষমতা ও পরিধি বৃদ্ধি করা। তারা কেবল বোর্ডের মিটিং-এর জন্যই ব্যাংকের সভাকক্ষে আসবেন এবং মিটিং শেষে কিছু সিদ্ধান্ত দিয়ে চলে যাবেন- তা নয়; বরং ব্যাংকের সকল কার্যক্রমে শরীয়তের নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কিংবা বোর্ডের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে কি না- তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁরা যে কোনো সময় ব্যাংকের যে কোনো শাখায় গিয়ে তার কার্যক্রম তদারকি ও নিরীক্ষা করতে পারবেন এবং কোথাও কোনো শরীয়া লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা_তা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে পারবেন।  

২.১০.একটি প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক যত ফ্লাকচুয়েশন আছে, আর যত রকম প্রাতিষ্ঠানিক রিস্ক আছে, যার মাসিক রিপোর্ট আরএমডি [রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ডিভিশন]-তে থাকে, তার এক কপি শরীয়া বোর্ডে নিয়মিত পেশ করা এবং সেগুলো পর্যালোচনায় দক্ষ ব্যক্তি শরীয়া বোর্ডে রাখা, যাতে বোর্ড ভবিষ্যতের জন্য করণীয় পথনির্দেশ দিতে পারে আর ব্যাংক দেউলিয়াত্বের আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

২.১১. (ইসলামী ব্যাংক যেহেতু একটি আইডিওলজিক্যাল ব্যাংক, তাই অভীষ্ট আইডিওলজির যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে) ব্যাংকে বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে শরীয়া বোর্ডের সুপারিশের একটি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা রাখা। এতে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী নয় কিংবা ইসলামী জীবনাদর্শ মেনে চলে না_ এরূপ কেউ ব্যাংকে অনুপ্রবেশের সুযোগ হ্রাস পাবে।

২.১২. ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় শরীয়া সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে অন্তত একজন যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলিমকে নিয়োগ দেওয়া। তাঁর স্বাক্ষর ব্যতীত কোনো বিনিয়োগ অনুমোদিত হবে না। তিনি শরীয়া পরিপালনে সংশ্লিষ্ট শাখার লোকজনকে সাহায্য করবেন এবং ব্যাংকের ক্লায়েন্ট ও অন্যদের শরীয়া বিষয়ক পরামর্শ ও অভিযোগ শুনবেন আর তাদের প্রশ্নের জবাব দিবেন। 

২.১৩. রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরে শরীয়া বিষয়ক অভিযোগ সেল থাকা। এখানে শরীয়া বিশেষজ্ঞগণ এতদসংক্রান্ত অভিযোগগুলো শুনানি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

৩. শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শরীয়া বোর্ড গঠন

৩.১. শরীয়া বোর্ডগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে একটি কেন্দ্রীয় শরীয়া বোর্ড থাকবে এবং এ কেন্দ্রীয় বোর্ড ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে শরীয়াভিত্তিক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে, যা ইসলামী ব্যাংকগুলো অনুসরণ করতে বাধ্য থাকবে।  

৩.২. কেন্দ্রীয় শরীয়া বোর্ডের সদস্যদের প্রত্যেকেই শরীয়া, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে যথেষ্ট সুখ্যাতির অধিকারী হবেন এবং সৎ ও সাহসী হিসেবেও সুপরিচিত হবেন। ব্যাংকগুলোর শরীয়া বোর্ডের কোনো সদস্য কেন্দ্রীয় শরীয়া বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন না। 

৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে শরীয়া সেল গঠন

৪.১. কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু দেশের সার্বিক ব্যংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ও তত্ত¡াবধায়ক, তাই এর অধীনেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য একটি শরীয়া সেল থাকতে হবে। এ সেল ইসলামী ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সার্বিকভাবে তত্ত¡াবধান করবে এবং ব্যাংকগুলো তার বিনিয়োগসহ সকল কাজে শরীয়া নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালন করছে কিনা_তা তদারকি করবে।

৪.২. শরীয়া সেল কোনো ব্যাংকের কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রমে শরীয়া নীতির ব্যত্যয় দেখতে পেলে সাথে সাথে সেল উক্ত ব্যাংককে সতর্ক করবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরীয়া সেল প্রত্যেকটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য এক একজন শরীয়া পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দিতে পারে। 

৪.৩. এ সেলের সদস্যগণও শরীয়া, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞ হবেন এবং সৎ ও সাহসী হিসেবেও সুপরিচিত হবেন। ব্যাংকগুলোর শরীয়া বোর্ডের কোনো সদস্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরীয়া সেলের সদস্য হতে পারবেন না।

৫. শক্তিশালী শরীয়াহ সেক্রেটারিয়েট গঠন

ব্যাংকিং কার্যক্রমে শরীয়া নীতিমালা প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য শরীয়া সুপারভাইজরি কমিটির পর ব্যাংকের দ্বিতীয় দায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো শরীয়া সেক্রেটারিয়েট, যা শরীয়া সুপারভাইজরি কমিটির একান্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করে। মাঠ পর্যায়ে শরীয়া নীতিমালার প্রয়োগ ও শরীয়া সুপারভাইজরি কমিটির সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মূলত সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ে শরীয়া সেক্রেটারিয়েটের ভূমিকাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে শরীয়া সেক্রেটারিয়েটকে শক্তিশালী  করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করছি:

৫.১. শরীয়া সেক্রেটারিয়েটের প্রত্যেক সদস্য শরীয়া বিষয়ে, বিশেষ করে ফিকহুল মু‘আমলাত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির পাশাপাশি কার্যক্ষেত্রেও বাস্তব জ্ঞানের অধিকারী হবেন। পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতি, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে তার কোনো স্বীকৃত ডিগ্রি (যেমন-CSAA সনদ) থাকতে হবে অথবা স্বীকৃত গবেষণা কর্ম থাকতে হবে। 

৫.২. শরীয়া সেক্রেটারিয়েটের প্রত্যেক সদস্য কর্মঠ, উদ্যোমী এবং সৃজনশীল যোগ্যতার অধিকারী হবেন। এ জন্য কেবল পেশাগতভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদেরকেই শরীয়া সেক্রেটারিয়েটে নিয়োগ দিতে হবে। 

৫.৩.  শরীয়া সেক্রেটারিয়েটের সদস্যগণ ব্যাংকের সকল কার্যক্রমে শরীয়া নীতিমালা ও শরীয়া সুপারভাইজরি কমিটির সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে কি নাÑ তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একদিকে সরেজমিনে ব্যাংকের যে কোনো শাখায় গিয়ে তার কার্যক্রম তদারকি ও নিরীক্ষা করতে পারবেন এবং এর পাশাপাশি ব্যাংকের Management Information System (MIS) ব্যবহার করে অফসাইট শরীয়া নিরীক্ষা ও পরিদর্শন পরিচালনা করতে পারবেন। এর ফলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাসমূহের বিনিয়োগে শরীয়া পরিপালনের বিষয়টি তদারকি করা এবং বছরব্যাপী শরীয়া পরিপালনের ব্যাপারে শাখাসমূহকে সচেতন রাখা, ত্রæটি-বিচ্যুতি সংশোধনে সহায়তা করা, সর্বোপরি শরীয়া পালনে সর্বাধিক সহযোগিতা করা সম্ভব হবে। 

৫.৪. শরীয়া সেক্রেটারিয়েট ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীয়া পরিপালনের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (ACR) তৈরি করবেন এবং পদোন্নতির সময় শরীয়া পরিপালনের ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স বিবেচনায় নিতে হবে। 

৬. শরীয়া অডিট

৬.১. পেশাগতভাবে দক্ষ ও যোগ্য লোকদেরকে মুরাকিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। এ জন্য শরীয়া বিষয়ক উচ্চ ডিগ্রির পাশাপাশি CSAA সনদ আছে এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে মুরাকিবের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। 

৬.২. শরীয়া নিরীক্ষা ও পরিদর্শনের সময় মুরাকিবদের যথার্থ সহযোগিতা করা এবং কোনো তথ্য গোপনের চেষ্টা না করা। যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাঁদের কাজে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা না করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

৬.৩. প্রতিমাসে শরীয়া অডিটের ভুলগুলোর মধ্যে কিছু বাড়ে আর কিছু কমে, আর প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী মাসের সতর্কতার জন্য মাসিকভাবে গুরুত্বের সর্টিন চেঞ্জ করে সকল ব্রাঞ্চ, সাবব্রাঞ্চ আর এজেন্ট ব্যাংককে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করা আর ফিজিকাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কাজগুলো করলো- কিনা তা নিয়মিত তদারকি আর ফাইনটিউন করা।

৬.৪. ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ শরীয়া অডিটের পাশাপাশি বৎসরে অন্তত একবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরীয়া সেল/কেন্দ্রীয় শরীয়া বোর্ডের অধীনে স্বাধীন বহিঃশরীয়াহ অডিট (External Shariah Audit)-এর ব্যবস্থা করা। পেশাদার হিসেবে বিশেষজ্ঞ ও শরীয়া বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ স্বাধীন অডিট কমিটি গঠন করা। এ কমিটি ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন, চুক্তি ও সামগ্রিক কার্যক্রমে শরীয়া বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা মানা হয়েছে কিনা- তা পরীক্ষা করবে এবং মূল্যায়ন করবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ওমান, পাকিস্তান, কুয়েত, বাহরাইন প্রভৃতি দেশগুলোর ইসলামী ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ শরীয়া অডিটের পাশাপাশি বহিঃশরীয়া অডিট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সোর্স: ড. আহমাদ আলী স্যারের পেইজ থেকে নেয়া 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!